মো. রকিবুল ইসলাম :: পৃথিবীর জলবায়ু হাজার হাজার বছর ধরে পরিবর্তিত হয়ে এসেছে। পৃথিবীর গঠন ও সূর্যের শক্তির পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন ধরনের জলবায়ু পরিবর্তন ঘটেছে। পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তন মানব সভ্যতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
প্রায় ৪৫ কোটি বছর আগে পৃথিবীর গঠন শুরু হলে মূলত ভূলকি, পর্বত, মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডলের গঠন ধাপে ধাপে ঘটেছিল। এই সময় থেকেই পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের সূচনা হয়। বরফ যুগ, গ্লেসিয়াল পিরিয়ড, এবং ইন্টারগ্লেসিয়াল পিরিয়ডের মতো বিভিন্ন সময়ের বৈশিষ্ট্য ছিলো ভূতাত্ত্বিক ও জলবায়ু পরিবর্তনের চিহ্ন। শেষ বরফ যুগ প্রায় ১১ হাজার বছর আগে শেষ হয়, যা মানব সভ্যতার জন্য নানাবিধ পরিবেশগত পরিবর্তন আনয়ণ করে।
মানব সভ্যতার উত্থানের সাথে সাথে শিল্পবিপ্লব (১৮শ ও ১৯শ শতকে) জলবায়ু পরিবর্তনের গতিবেগ বাড়িয়ে দেয়। বড় পরিমাণে কয়লা, তেল ও গ্যাসের ব্যবহার শুরু হওয়ায় বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে।
১৯শ শতকের শেষে বিজ্ঞানীরা প্রথমবার বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৯৯২ সালে Rio Earth Summit এ জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (UNFCCC) গঠন করা হয়, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উদ্যোগ নেয়ার পথ প্রশস্ত করে। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে কিয়োটো প্রোটোকল ও ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বড় পদক্ষেপ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বরফ গলছে, সমুদ্র স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দুর্যোগের তীব্রতা বাড়ছে। এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়া, প্রাণীর বাসস্থান সংকুচিত হওয়া এবং মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া ভবিষ্যতে ভয়াবহ জলবায়ু বিপর্যয় আশঙ্কাজনক।
তবে বিশ্বজুড়ে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় আশার আলো। COP সম্মেলনগুলো এই ঐক্য ও উদ্যোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে, প্রকৃতির সাথে সঙ্গতি বজায় রাখা কত জরুরি। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ও সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলাই এখন বিশ্ববাসীর প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
আপনার মতামত লিখুন :