ক্রীড়া ডেস্ক
বড় মঞ্চে স্নায়ুচাপ সামলাতে পারে না বলে একটা বদনাম বয়ে চলছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বর্ণবাদের নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর গত ৩২ বছরে দারুণ সব ক্রিকেটারে ঠাসা দল নিয়েও প্রজন্মের পর প্রজন্ম কোনো শিরোপার দেখা মেলেনি। ক্যারিবীয় দ্বীপে প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে সেই অভিশাপ ঘুচানোর দুয়ারে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু নাহ, ঘুরেফিরে ‘চোকার্স’ তকমাই জুটল প্রোটিয়াদের। শিরোপা মঞ্চে দক্ষিণ আফ্রিকার হৃদয় ভেঙে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত।
গত ১১ বছর ধরে আইসিসির টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতা হয়নি ভারতের। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে শনিবার (২৯ জুন) দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাত রানে হারিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসন ঘটালো রোহিত শর্মার দল। সেই সঙ্গে পুরো টুর্নামেন্টে সবকটি ম্যাচ জিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ইতিহাসও গড়ল ভারত।
ফাইনাল মঞ্চে শিরোপার স্বাদ পেতে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে লক্ষ্য পড়ে ১৭৭ রানের। রান তাড়ায় শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। দলীয় ২৩ রানেই নেই দুই উইকেট। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই রিজা হেনড্রিকসকে বোল্ড করে সাজঘরে পাঠান জাসপ্রিত বুমরাহ। পরের ওভারে আর্শদিপ সিংয়ের ছোবল। তার অফ স্টাম্পের বাইরের বলটিতে ব্যাট চালিয়ে দেন মার্করাম। হালকা বেরিয়ে যাওয়া বলটি ব্যাটে খেলতে পারলেন না তিনি। ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় কিপার পন্থের হাতে। ৪ রানে ফেরেন প্রোটিয়া অধিনায়ক।
পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেটের বিনিময়ে ৪২ তুলে খানিকটা চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে সেই চাপ সামলে দলকে পথ দেখান ডি কক ও স্টার্বস। তৃতীয় জুটিতে দুজন মিলে যোগ করেন ৩৮ বলে ৫৮ রান। নবম ওভারে প্যাটেলের স্পিনে বোল্ড হয়ে ৩১ রানে ফেরেন স্টার্বস। পরের জুটিও সহায়ক ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। ডি কক চতুর্থ জুটিতে ক্লাসেনের সঙ্গে ৩৬ রান এনে দিয়ে ফেরেন সাজঘরে। আর্শদিপকে ফাইন লেগে খেলতে গিয়ে ৩৯ রানে কুলদিপের হাতে ধরা পড়েন ডি কক।
পরের গল্পটা হেনরিখ ক্লাসেনের। মিডল অর্ডারে নেমে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন ক্লাসেন। বার্বাডোজে ছক্কা বৃষ্টি নামিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয়ের পথেই নিয়ে যান ক্লাসেন। কিন্তু পান্ডিয়া সেটা হতে দিলেন না। এসেই তুলে নেন ক্লাসেনকে। পান্ডিয়ার শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১৯২ স্ট্রাইক রেটে ২৭ বলে ৫২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন ক্লাসেন।
ক্লাসেনের বিদায়ের পর পাল্টে যায় পুরো চিত্র। হার্দিক পান্ডিয়া ক্লাসেনকে ফেরানোর সাথে সাথে মনে হয় ম্যাচটা কেড়ে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। এর আগে ব্রিজটাউনে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ১৭৬ রান তোলে ভারত। ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন বিরাট কোহলি।
ব্যাট হাতে ভারতের শুরুটা হয়েছিল ঝড়ো। মার্কো ইয়ানসেনের প্রথম ওভারে কোহলি ও রোহিত মিলে তোলেন ১৫ রান। দ্বিতীয় ওভারেও কেশভ মহারাজের প্রথম দুই বলে চার মারেন রোহিত। তবে, তৃতীয় বলেই স্কয়ার লেগে হেনরিখ ক্লাসেনের হাতে ধরা পড়েন তিনি। আউটের আগে করেন ৫ বলে ৯ রান। এর দুই বল পরই সাজঘরে ফেরেন রিশাভ পন্থ। দ্বিতীয় ওভারের ষষ্ঠ বলে টপ এজ হয়ে বল উপরে উঠে যায়। সেটি লুফে নেন উইকেটরক্ষক ডি কক। এরপর সূর্যকুমার যাদবকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন কোহলি।
স্থায়ী হলো না। পঞ্চম ওভারে কাগিসো রাবাদার করা ওভারের তৃতীয় বলে ফাইন লেগ দিয়ে মারতে গিয়ে ক্লাসেনের হাতে ধরা পড়েন সূর্য (৩)। এরপর অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে দারুণ জুটি গড়েন কোহলি। ৩৪ রানেই ৩ উইকেট হারানো ভারতকে টেনে তোলেন এই জুটি। প্রোটিয়া বোলারদের পাত্তা না দিয়ে গড়েন ৫৪ বলে ৭২ রানের অবিশ্বাস্য জুটি। শেষমেশ দলীয় ১০৬ রানের রান আউটের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন অক্ষর। সাজঘরে ফেরার আগে খেলেন ৩১ বলে ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংস।
এরপর কোহলির সঙ্গে যোগ দেন আরেক ব্যাটার শিবাম দুবে। ৪৮ বলে এবারের বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটি তুলে নেন কোহলি। পরে দুবেকে নিয়ে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেন কোহলি। যদিও দলীয় ১৬৩ রানে জেনসেনের বলে রাবাদার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। আউটের আগে খেলেন ৫৯ বলে ৭৬ রানের দাপুটে ইনিংস। এরপর বিদায় নেন দুবেও। ১৬ বলে ২৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৭৬/৭ (রোহিত ৯, কোহলি ৭৬, পন্থ ০, সূর্য ৩, আকসার ৪৭, দুবে ২৭, পান্ডিয়া ৫*, জাদেজা ২; ইয়ানসেন ৪-০-৪৯-১, মহারাজ ৩-০-২৩-২, রাবাদা ৪-০-৩৬-১, মার্করাম ২-০-১৬-০, নরকিয়া ৪-০-২৬-২, শামসি ৩-০-২৬-০)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৬৯/৮ (হেনড্রিকস ৪, ডি কক ৩৯, মার্করাম ৪, স্টাবস ৩১, ক্লাসেন ৫২, মিলার ২১, ইয়ানসেন ২, মহারাজ ২*, রাবাদা ৪, নরকিয়া ১*; আর্শদিপ ৪-০-২০-২, বুমরাহ ৪-০-১৮-২, প্যাটেল ৪-০-৪৯-১, কুলদিপ ৪-০-৪৫-০, হার্দিক ৩-০-২০-৩, জাদেজা ১-০-১২-০)।
ফল: ভারত ৭ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: বিরাট কোহলি।
ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট: জাসপ্রিত বুমরাহ।
আপনার মতামত লিখুন :